সড়ক ছেড়ে নানা অজুহাতে বাসাবাড়িতেও দাপট দেখাচ্ছেন তারা। অশ্রাব্য গালাগাল, নগ্ননৃত্য প্রদর্শন, ভাঙচুর চালানো, মারধরসহ নানা অপকর্মে মেতে উঠেছেন হিজড়ারা। নানা রকম ভয়ভীতি, সম্মানহানির হুমকি, বকাবাজি করে তুলছেন চাঁদা। টাকা দিতে না চাইলে সংঘবদ্ধ হয়ে মারধর করছেন। এমন পরিস্থিতি দেশব্যাপী।
[৩] নাটোর শহরে ও গ্রামাঞ্চলে গত একমাস ধরে উৎপাত বেড়েছে এই হিজড়াদের। 'বাচ্চা নাচাতে দে, নইলে তোরা বিপদে পড়বি! বাচ্চা পানিতে পড়বে, আগুনে পুড়বে, করোনায় মরবো' এমন সব ভয়ঙ্কর অভিশাপ দিয়ে নবজাতকের পরিবারে ভীতির সৃষ্টি করে হাজার হাজার টাকা, বিভিন্ন মালামাল হাতিয়ে নিচ্ছে হিজড়ার দল। এ পর্যন্ত নাটোর শহরের ৫০ বাড়িতে হানা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নতুন গড়ে উঠা হিজরা দলের সদস্য সেতু হিজরা, বাদল হিজরা, বাপ্পী হিজরাসহ ৮ থেকে ১০ জনের এই দলটি শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
[৪] চাহিদা পূরণ না করলে বাচ্চা ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হাতে-পায়ে ধরে এমনকি বাচ্চা লুকিয়ে রেখেও রেহাই পাচ্ছেন না সন্তানের মা-বাবারা। কমিশনে রাখা সোর্সরা কোনো বাড়িতে সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে তার সন্ধান দিচ্ছে হিজড়াদের। দিনমজুর ও অসহায় অনেক পরিবারকে হিজড়াদের অনৈতিক দাবি মেটাতে গিয়ে পড়েছে চরম সংকটে। তাদের অত্যাচারে মানুষ ও নবজাতকের পরিবার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
[৫] স্থানীয়রা বলেন, হিজড়াদের টাকা তোলা নতুন কিছু নয়। আগে মানুষ যা দিত, তা নিয়েই খুশি থাকতো হিজড়ারা। কিন্তু ইদানীং তাদের আচরণ বদলে গেছে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট যেখানে-সেখানে টাকার জন্য মানুষকে নাজেহাল করছে তারা। প্রশাসনও অসহায় হিজরাদের আচরণে!
[৬] ভুক্তভোগী উত্তর বড়গাছা মহল্লার বাসিন্দা জাকিয়া সুলতানা বলেন, বাচ্চার বয়স ২০ দিন না হতেই একদল হিজড়া এসে হাজির। হট্টগোল শুরু করে। ১১ হাজার টাকা না দিলে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। নবজাতক মারা যাবে বলে নানা অভিশাপ দিতে থাকে। পরে তিনি প্রতিবেশির নিকট থেকে ধার নিয়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে রেহাই পান।
[৭] বনবেল ঘড়িয়া মহল্লার রুমা খাতুন নামের এক নারী পুলিশ সদস্য জানান, এক সপ্তাহ আগে হিজড়ার দল বাড়িতে ঢুকে ২০ দিন বয়সী মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে ঝাঁকিয়ে নৃত্য শুরু করে। এতে তার বাচ্চা ভয়ে চিল্লাতে থাকে। তারা এগারো হাজার টাকা দাবি করলে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে রেহাই পান।
[৮] শহরের বনবেলঘড়িয়া মহল্লার ব্যবসায়ী গাজী মাজহারুল বলেন, আমার মেয়ের বিয়ে ছিল ২৮ ডিসেম্বর। বরযাত্রী আসামাত্র হঠাৎ করেই এসে একদল হিজরা আমার বাসার গেটে এসে এগারো হাজার টাকা দাবি করে। আমি খুশি মনে তাদের দুই হাজার টাকা দিতে চাই। তারা টাকা না নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, ধাক্কাধাক্কি, সবার সামনে নগ্ন হতে চাওয়াসহ বিভিন্ন অশ্লীল আচরণ ও তুমুল হট্টগোল সৃষ্টি করে। আমি থানায় ফোন দিয়ে পুলিশ ডেকে আনলে তারা নগ্ন হয়ে নাচানাচি শুরু করে। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় ৫ হাজার টাকা রেহায় পায়।
[৯] হিজড়াদের এমন উৎপাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও এদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলে অনেকের মন্তব্য। ফলে শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে হিজড়া আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে হিজড়ারা। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, পতিতাবৃত্তি, মারামারিসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। হিজড়া হওয়ার কারণে এমনিতেই এরা সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পাচ্ছে। আর এ সুযোগে তারা আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদেরকেও পাত্তা দিচ্ছে না। ফলে এদের অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
[১০] তবে হিজড়াদের দলনেতা সেতু হিজরা জোর করে টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিয়ে তো মানুষ প্রতিদিন দেয় না আমরা তো আর তাদের বাসায় প্রতিদিন যাই না। বিয়েতে যদি লক্ষ টাকা খরচ করতে পারে তাহলে আমাদের পেট চালানোর তাগিদে অল্প কিছু টাকা পয়সা দিতে আপত্তি কোথায়। তাছাড়া আমরা জোর করে টাকা তুলিনা। আপসে যে যা দেয় তাই নেয়। টাকা না তুললে আমরা নিরুপায়। আমাদের আয়-রোজগারের কোনো সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি।
[১১] নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, হিজড়াদের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ এলেও মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তবে কেউ যদি ভয়ঙ্কর ধরনের অপরাধ করে তাহলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
https://www.amadershomoy.com/bn/2022/01/03/1552677.asp
No comments:
Post a Comment