অ্যাডভোকেট শাহানূর
ইসলাম সৈকত: প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা প্রায়শই শোনা গেলেও দেশের বর্তমান সামগ্রিক
অবস্থায় তাদের প্রতি অবহেলা, অযত্ন, অজ্ঞতা,
ভয় ও
কুসংস্কারের ফলে সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধী
ব্যক্তির অংশগ্রহণ তেমন চোখে পড়ে না। যদিও দেশের জাতীয় উন্নয়ন, ক্ষমতায়নসহ সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির
জন্মগত অধিকার রয়েছে।
বাবা মা শিশু বেলায় তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তিতে অনীহা প্রকাশ করলেও কোন উচ্চাকাংখ্যা ব্যতীত এক সময় তাকে স্থানীয় একটি প্রথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। যদিও স্কুলটি তার বাড়ী থেকে পাঁচ মিনিটের হাটার দুরুত্ব, কিন্তু তার কাছে মনে হত অফুরন্ত পথ, কারণ তাকে প্রতিদিন হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হত।
নিজ বাড়ীর পাশে অবস্থিত বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারলেও অন্যগ্রামে মাধ্যমিক বিদ্যালয় অবস্থিত হওয়ায় তিনি সেখানে অধ্যয়নের আশা ত্যাগ করেন।
উচ্চ শিক্ষাগ্রহণের প্রচণ্ড ইচ্ছে থাকে সত্বেও পারিবারিক অস্বচ্ছলতা ও সামাজিক/রাষ্ট্রীয় সুযোগের অভাবে তিনি কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় তাঁর লেখাপড়া। তাঁকে বেড়িয়ে পড়তে হয় জীবীকার সন্ধানে।
নগরীতে প্রতিবন্ধীরা যেন অলিখিত ভাবে নিষিদ্ধ। নগরীতে চলার পথে সব জায়গা বাঁধা। সব ক্ষেত্রে তাদের প্রতিবন্ধকতা। প্রতিবন্ধী ভাড়া দেবেনা এই অজুহাতে যাত্রী পরিবহন তাদের তুলতে চায়না।
অনেক সময় তাদের রাস্তার মাঝখানেই নামিয়ে দেওয়া হয়। নগরীর বাজার, বিপণী বিতান, রাস্তাঘাট, অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায় বাধা।
মহসীন তার প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হতে এ সমাজে বড় হয়। ফলে সমাজের অন্য সবার মাঝে থেকেও নিজেকে তার আগন্তক মনে হতে থাকে।
মহসীন একজন মানব সন্তান হিসেবে এই সমাজ ও বিশ্বের অন্তর্গত। তাছাড়া, জাতিসংঘ সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলসহ বাংলাদেশ সংবিধানে সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও সুযোগ পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। তাহলে কেন তাঁকে সকল ক্ষেত্রে “না” শ্রবণ করতে হয়? কেন তিনি অন্যান্য মানুষের মত সাধারণ নাগরিক সুবিধা পান না? কেন তিনি আজ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত?
“ডিসেবিলিটি কোন অলংঘনীয় বাঁধা নয়। যথাযথ সমর্থন ও সুযোগের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সকল বাধা অতিক্রম করে কার্যকর অংশ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়নে দৃষ্ঠান্তমূলক ভূমিকা রাখতে সক্ষম”- এই বিশ্বাসে বলীয়ান মহসীন “প্রতিবন্ধীর জন্য সর্বত্র সহজে প্রবেশগম্যতা” এর দাবীতে একটি সচেতনাতামূলক প্রচারাভিযান পরিচালনা করার স্বপ্ন দেখে।
হুইল চেয়ারে বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে তিনি তার স্বপ্ন সফল করতে চান। বিশ্ব না হোক অন্তত পক্ষে হুইল চেয়ারে সমগ্র বাংলাদেশ ভ্রমনের আগে যেন তার মৃত্যু না হয় সৃষ্টিকর্তার নিকট তিনি সর্বদা এই প্রার্থনা করেন। তার এ স্বপ্ন পুরুনের জন্য প্রয়োজন অনেক অর্থের, যা তার পক্ষে একা যোগার করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন আমার আপনার মত যারা সমাজের সকল সাধারণ অধিকার ভোগ করছি তাদের আন্তরিক সহযোগিতা।
লেখক: মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী ও কলামিস্ট; মোবাইল: ০১৭২০৩০৮০৮০; ই-মেইল: saikotbihr@gmail.com; ব্লগ: www.shahanur.blogspot.com
মোঃ মহসিন (অনুমতি সাপেক্ষে
প্রকাশিত) ১৯৮৭ সালে গাজীপুর
জেলার টঙ্গী থানাস্থ মরকুন (পূর্বপাড়া) জন্ম গ্রহন করেন। পিতামাতার প্রথম সন্তান বলে
মহসিনের বাবা মা ছিল ভীষন খুশি। কিন্তু তাদের আনন্দ দীর্ঘশ্বাসে পরিনত হয় ছয় মাস
বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি যখন স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
বাবা মা শিশু বেলায় তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তিতে অনীহা প্রকাশ করলেও কোন উচ্চাকাংখ্যা ব্যতীত এক সময় তাকে স্থানীয় একটি প্রথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। যদিও স্কুলটি তার বাড়ী থেকে পাঁচ মিনিটের হাটার দুরুত্ব, কিন্তু তার কাছে মনে হত অফুরন্ত পথ, কারণ তাকে প্রতিদিন হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হত।
নিজ বাড়ীর পাশে অবস্থিত বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারলেও অন্যগ্রামে মাধ্যমিক বিদ্যালয় অবস্থিত হওয়ায় তিনি সেখানে অধ্যয়নের আশা ত্যাগ করেন।
কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ক্লাশ না করে
শুধু পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে তাকে স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে
ভর্তি করেন। এভাবে তিনি মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে
উত্তীর্ন হন।
উচ্চ শিক্ষাগ্রহণের প্রচণ্ড ইচ্ছে থাকে সত্বেও পারিবারিক অস্বচ্ছলতা ও সামাজিক/রাষ্ট্রীয় সুযোগের অভাবে তিনি কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় তাঁর লেখাপড়া। তাঁকে বেড়িয়ে পড়তে হয় জীবীকার সন্ধানে।
কিন্তু সমাজের প্রতিকুল পরিস্থিতির কারণে এক সময় তিনি
নিজেকে অবাঞ্চিত বিবেচনা করতে শুরু করে।
একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে অন্যন্য সকল প্রতিবন্ধী
ব্যক্তির মত তিনি যখন ব্যক্তিগত কাজে বাইরে যেতে চাইত, তাকে গন্তব্যস্থল সমন্ধে আগে খোঁজ খবর নিতে হত
যে জায়গাটা তাদের জন্য কতটুকু যাওয়ার জন্য উপযোগী। অনেক সময় শারীরিক সীমাবদ্ধতা
কাটিয়ে সব যায়গায় চলাফেরা করাও সম্ভব হয়ে ওঠত না।
নগরীতে প্রতিবন্ধীরা যেন অলিখিত ভাবে নিষিদ্ধ। নগরীতে চলার পথে সব জায়গা বাঁধা। সব ক্ষেত্রে তাদের প্রতিবন্ধকতা। প্রতিবন্ধী ভাড়া দেবেনা এই অজুহাতে যাত্রী পরিবহন তাদের তুলতে চায়না।
অনেক সময় তাদের রাস্তার মাঝখানেই নামিয়ে দেওয়া হয়। নগরীর বাজার, বিপণী বিতান, রাস্তাঘাট, অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায় বাধা।
মহসীন তার প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হতে এ সমাজে বড় হয়। ফলে সমাজের অন্য সবার মাঝে থেকেও নিজেকে তার আগন্তক মনে হতে থাকে।
পরিবার থেকে সমাজ,
সমাজ থেকে
রাষ্ট্র এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে তাঁকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। তার জীবনের
পাতা “না” শব্দতে পরিপূর্ন। তার মানবাধিকারও"না"
বেষ্টিত।
সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বিনোদনসহ সকল কর্মকাণ্ড ও স্থানে এই নেতিবাচক
শব্দ "না" শ্রবণ করে করে তিনি এখন বড় ক্লান্ত।
মহসীন একজন মানব সন্তান হিসেবে এই সমাজ ও বিশ্বের অন্তর্গত। তাছাড়া, জাতিসংঘ সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলসহ বাংলাদেশ সংবিধানে সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও সুযোগ পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। তাহলে কেন তাঁকে সকল ক্ষেত্রে “না” শ্রবণ করতে হয়? কেন তিনি অন্যান্য মানুষের মত সাধারণ নাগরিক সুবিধা পান না? কেন তিনি আজ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত?
“ডিসেবিলিটি কোন অলংঘনীয় বাঁধা নয়। যথাযথ সমর্থন ও সুযোগের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সকল বাধা অতিক্রম করে কার্যকর অংশ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়নে দৃষ্ঠান্তমূলক ভূমিকা রাখতে সক্ষম”- এই বিশ্বাসে বলীয়ান মহসীন “প্রতিবন্ধীর জন্য সর্বত্র সহজে প্রবেশগম্যতা” এর দাবীতে একটি সচেতনাতামূলক প্রচারাভিযান পরিচালনা করার স্বপ্ন দেখে।
হুইল চেয়ারে বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে তিনি তার স্বপ্ন সফল করতে চান। বিশ্ব না হোক অন্তত পক্ষে হুইল চেয়ারে সমগ্র বাংলাদেশ ভ্রমনের আগে যেন তার মৃত্যু না হয় সৃষ্টিকর্তার নিকট তিনি সর্বদা এই প্রার্থনা করেন। তার এ স্বপ্ন পুরুনের জন্য প্রয়োজন অনেক অর্থের, যা তার পক্ষে একা যোগার করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন আমার আপনার মত যারা সমাজের সকল সাধারণ অধিকার ভোগ করছি তাদের আন্তরিক সহযোগিতা।
হুইল চেয়ারে সমগ্র বাংলাদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে “প্রতিবন্ধীর জন্য সর্বত্র সহজে প্রবেশগম্যতা” ‘র দাবীতে মহসিনের এই সচেতনাতামূলক
প্রচারাভিযান পরিচালননায় সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কাম্য। জয় হোক মানবতার!!!
লেখক: মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী ও কলামিস্ট; মোবাইল: ০১৭২০৩০৮০৮০; ই-মেইল: saikotbihr@gmail.com; ব্লগ: www.shahanur.blogspot.com
নিবন্ধটি নিম্নোক্ত নিউজমিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছেঃ
13. প্রতিবন্ধীর স্বপ্ন : হুইল চেয়ারে বাংলাদেশ ভ্রমণ, BijoyNews24.Com, July 08,2013
14. প্রতিবন্ধীর স্বপ্ন : হুইল চেয়ারে বাংলাদেশ ভ্রমণ, Bangla.Se, July 08,2013
15. প্রতিবন্ধীর স্বপ্ন: হুইল চেয়ারে বাংলাদেশ ভ্রমণ!, Gorai24.Com, July 07, 2013
======================================================================
Personal site of Advocate Shahanur Islam (an young, ascendant and promising human rights defender and lawyer) working for ensuring human rights, rule of law and social justice in Bangladesh and the Globe. কপিরাইট © অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত. সকল সত্ব ® সংরক্ষিত. শাহানূর ডট ব্লগস্পট ডট কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোন নিবন্ধ, মতামত, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ব্যতীত ব্যবহার আইনগত দণ্ডনীয়.
14. প্রতিবন্ধীর স্বপ্ন : হুইল চেয়ারে বাংলাদেশ ভ্রমণ, Bangla.Se, July 08,2013
15. প্রতিবন্ধীর স্বপ্ন: হুইল চেয়ারে বাংলাদেশ ভ্রমণ!, Gorai24.Com, July 07, 2013
======================================================================
Personal site of Advocate Shahanur Islam (an young, ascendant and promising human rights defender and lawyer) working for ensuring human rights, rule of law and social justice in Bangladesh and the Globe. কপিরাইট © অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত. সকল সত্ব ® সংরক্ষিত. শাহানূর ডট ব্লগস্পট ডট কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোন নিবন্ধ, মতামত, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ব্যতীত ব্যবহার আইনগত দণ্ডনীয়.
No comments:
Post a Comment