
নির্দিষ্ট পর্যায়ে অভিযুক্ত আসামীর জন্য নির্দিষ্ট কিছু অধিকার খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।অপরাধে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তির সর্বপ্রথম পুলিশের সান্নিধ্যে আসতে হয়, যেখানে
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘিত হয়। তাই, সকল
নাগরিকের পুলিশী ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে সুরক্ষা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও পুলিশি অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য পরিশীলিত আইন রয়েছে।
কোন অপরাধ সংঘটিত হক বা
না হক একজন পুলিশ
কর্মকর্তা ইচ্ছে করলে কোন সাধারণ নাগরিকের পরিচয় যাচাই করতে পারে
কিনা অথবা তাকে পরিচয় প্রদান করতে বাধ্য করতে পারে কি কিনা? সে
বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে ভিন্ন আইন ও রীতি
প্রচলিত রয়েছে। কোন রাষ্ট্রে পুলিশ তা করতে
পারে, আবার কোন রাষ্ট্রে যথাযথ কারণ ছাড়া
তা করতে পারে না। তবে আদালত
প্রায়শ উল্লেখ করেন যে, যখন
একজন পুলিশ অফিসার কোন নাগরিককে পরিচয় প্রদান করতে বলে,
তখন উক্ত নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার অত্যন্ত গৌন হয়ে পড়ে।
ফ্রান্স:
ফরাসী ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৮-২ ধারা
অনুযায়ী যদি নিম্নলিখিত বিষয়াদির মধ্যে এক বা একাধিক
বিষয়ে যথাযথ সন্দেহ বিদ্যমান থাকে, তবে
বিচারিক পুলিশ যে কোন ব্যক্তির পরিচয়
যাচাই করতে বা পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে:
- উক্ত ব্যক্তি কোন অপরাধ সংগঠন করে বা সংগঠন করার প্রচেষ্টা করে;
- উক্ত ব্যক্তি অপরাধ বা অপকর্ম করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে;
- উক্ত ব্যক্তি কোন গুরুত্বর অপরাধ বা অপকর্মের তদন্তকার্যে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানে সক্ষম হলে;
- উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বিচারিক কর্তৃপক্ষ তদন্তের আদেশ প্রদান করলে।
উপরন্তু, ফরাসী
ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৮-৩ ধারা
অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি
তার পরিচয় প্রদান করতে অস্বীকার করে, তবে
যতক্ষণ না সে ব্যক্তির পরিচয়
নির্ণীত হয়, ততক্ষণ
পর্যন্ত তাকে আটক রাখা যেতে
পারে। তবে আটকের সময় ৪
ঘণ্টার বেশী হবে না এবং
পরিচয় যাচাইয়ের জন্য অবশ্য ফরাসী ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৮-২ ধারায়
বর্ণিত কারণসমূহের এক বা একাধিক
বিদ্যমান থাকতে হবে।
সংখ্যালঘুদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি করার জন্য
ফরাসী পুলিশ এ বিধান প্রয়োগ করে মর্মে
সমালোচনা করা হয়। ২০০৭
ও ২০০৮ সালে বেশ কয়েক মাস
ধরে প্যারিসের Gare du Nord ও Chatelet-les Halles রেল স্টেশন
এলাকায় জরিপ চালিয়ে সংগ্রহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় যে, সাদাদের
চেয়ে আরব ও কালোদের
৭.৮ ভাগ বেশিবার
স্বেচ্ছাকৃতভাবে থামিয়ে পরিচয়পত্র যাচাই করা হয়।
জার্মানী:
জার্মান ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৩-বি (১)
ধারা অনুযায়ী পুলিশ অপরাধের সাথে জড়িত সন্দেহযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করতে করতে বা পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে।
আবার, ১৬৩-বি (২)
ধারা অনুযায়ী যদি ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগ তদন্তে প্রয়োজন হয়, তবে
অপরাধের সাথে জড়িত এমন সন্দেহ ব্যতীতও পুলিশ যেকোন ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করতে পারে।
এমনকি ১৬৩-সি ধারা
অনুযায়ী কোন ব্যক্তি পরিচয় প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে যতক্ষণ না তার
পরিচয় নির্ণিত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত উক্ত ব্যক্তিকে আটক
রাখতে পারে।
অন্যান্য অনেক দেশের মতে, জার্মান
পুলিশ সংখ্যালঘু (বিশেষত ইসলাম ধর্মাম্বলী ব্যক্তি) অভিবাসীদের পরিচয় যাচাইয়ের নামে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকে।
ভারত:
ভারতীয় ফৌজদারী কার্যবিধির ৪২ (১) ধারা
অনুযায়ী কোন ব্যক্তি আমলের অযোগ্য অপরাধ করেছে বা অপরাধে
অভিযুক্ত মর্মে পুলিশের নিকট বিশ্বাস করার যথেষ্ঠ কারণ বিদ্যমান থাকে, তবে
তার নাম, পরিচয়
ও বাসস্থান যাচাই করতে করতে বা পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে।
কোন ব্যক্তি নাম ঠিকানা প্রদানে অস্বীকার করলে তাকে
গ্রেফতার করতে পারে। এমনকি যদি মিথ্যা নাম ও
ঠিকানা প্রদান করে তবে তাকে
গ্রেফতার করতে পারে। তাছাড়া, ফৌজদারী
কার্যবিধির ৪২(২) ধারা
অনুযায়ী যদি আটককৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্য কোন
অভিযোগ না থাকে তবে
তার সঠিক নাম, পরিচয়
ও বাসস্থান নির্ণিত হওয়ার পর অবশ্য মুক্তি দিতে হবে।
স্পেন:
স্পেনের জাতীয় আদালতের মতে জাতিগত পরিচয় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত
আছে মর্মে উপযুক্ত সন্দেহ ছাড়াই পুলিশ কর্মকর্তা যেকোন ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করতে বা পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে। স্পেনের
সাংবিধানিক আদালত পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে বৈধ বলে অনুসমর্থন করে।
আমেরিকা:
Hiibel v. Sixth
Judicial District Court of Nevada, 542 U.S. 177 (2004), মামলায়
আমেরিকান সুপ্রিম কোর্টের মতে সংবিধানের ১৪ তম
অথবা ১৫ তম সংশোধনী
রাষ্ট্র কর্তৃক কোন নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিচয় যাচাই নিষিদ্ধ করেনি। তবে তা
সাধারণভাবে অবশ্য যথাযথ যুক্তিসংগত হবে এবং সাংবিধানিক অধিকারকে যেন
খর্ব না করে তা
নিশ্চিত করতে হবে। উক্ত মামলায় আদালত আরও মত দেন
যে, যখন কোন ব্যক্তির বিরূদ্ধে কোন
অপরাধে জড়িত থাকার ব্যাপারে যতেষ্ঠ যুক্তিসংগত সন্দেহ বিদ্যমান থাকে, সেক্ষেত্রে পুলিশ
কর্মকর্তা তার পরিচয় যাচাই করেতে পারে। তবে Hiibel মামলায় যথাযথ যুক্তিসংগত সন্দেহ বিদ্যমান ব্যতীত কোন ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করা সংবিধান
স্বীকৃত কিনা আদালত সে সিদ্ধান্ত প্রদান করেনি। তবে নিউইয়র্ক রাজ্যে
যুক্তিসংগত সন্দেহ ছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা কোন ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করতে বা
পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে।
বাংলাদেশ:
ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৭ (১) ধারা
অনুযায়ী যখন কোন ব্যক্তি
কোন অফিসারের উপস্থিতিতে আমলের অযোগ্য অপরাধ করে বা এরূপ
অপরাধ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং উক্ত
অফিসার দাবি করলে নিজের নাম ও বাসস্থান জানাতে
অস্বীকার করলে অথবা এরূপ নাম ও ঠিকানা
জানায় যা উক্ত অফিসার
যুক্তিসংগতভাবে মিথ্যা বলে মনে করে
তখন তার নাম ও
ঠিকানা খুজে বের করার জন্য
উক্ত অফিসার তাকে গ্রেফতার করতে পারে। আবার ৫৭ (২) ধারা
অনুযায়ী তার প্রকৃত নাম ও
ঠিকানা পাওয়া গেলে প্রয়োজনবোধে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির হওয়ার উদ্দেশ্যে জামিনসহ বা জামিন ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদনের পর তাকে
ছেড়ে দিতে হয়। ৫৭ (৩)
ধারা অনুযায়ী গ্রেফতারের সময় হতে চব্বিশ
ঘন্টার মধ্যে যদি তার প্রকৃত
নাম ও ঠিকানা না পাওয়া
যায় অথবা সে যদি মুচলেকা
দিতে ব্যর্থ হয় অথবা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জামিনদার সংগ্রহ
করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে
তাকে সংগে সংগে নিকটতম এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট উপস্থিত করতে হবে।
AIR 1941
Lag.422 মামলায় আদালতের মতে যেক্ষেত্রে পুলিশ
অফিসারের উপস্থিতিতে আমল-অযোগ্য অপরাধ ঘটেনি, সেক্ষেত্রে তিনি
নাম বলার জন্য কোন ব্যক্তির কাছে দাবি
করতে পারেন না এবং এরূপ
ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি তার নাম
বলতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি তাকে গ্রেফতার করতে পারেন না। আবার AIR 1919 ALL 160 মামলায়
আদালতের মতে নাম বলতে
অস্বীকৃতি জানানোয় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির সত্য নাম-ঠিকানা পাওয়া গেলে এবং
উপযুক্ত মুচলেকা প্রদান করলে তাকে অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে।
পুলিশ কর্তৃক কোন ব্যক্তির পরিচয় সনাক্তকরনে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার
যদিও খুব গৌন বলে গন্য করা হয়,তার পরও পুলিশ যথাযথ কারণ ছাড়া
খেয়াল খুশি মত যখন তখন কোন ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করতে বা কোন ব্যক্তিকে তার পরিচয়
প্রদান করতে বাধ্য করতে পারে না। সিভিল এবং কমন উভয় ল’ভুক্ত দেশসমূহে কোন ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করতে হলে উক্ত
ব্যক্তি কোন অপরাধমূলক কার্যে যুক্ত বা উক্ত ব্যক্তির নিকট থেকে কোন তদন্তনাধীন
মামলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে মর্মে বিশ্বাসযোগ্য কারণ বিদ্যমান
থাকতে হয়। যদি বিশ্বাসযোগ্য কারণ বিদ্যমান থাকা সত্বেও কোন ব্যক্তি তার পরিচয়
প্রদানে অস্বীকৃতি জানায় বা অসত্য তথ্য বা পরিচয় প্রদান করে,তবে উক্ত ব্যক্তির সঠিক পরিচয় নির্ণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে আটক রাখা যায়,তবে তা অযৌক্তিক সময় পর্যন্ত বিলম্বিত হবেনা। সর্বোপরি,সঠিক পরিচয় নির্ণিত হলে এবং উক্ত ব্যক্তি অন্য অপরাধ সংগঠন করেছে মর্মে
কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে তাকে অবশ্য যথা শীঘ্রই মুক্তি প্রদান করতে হবে।
লেখক:মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী ও সাংবাদিক; প্রতিষ্ঠাতামহাসচিব, জাস্টিসমেকার্সবাংলাদেশ; মোবাইলঃ ০১৭২০৩০৮০৮০, ইমেল: saikotbihr@gmail.com, ব্লগ: www.shahanur.blogspot.com
নিবন্ধটি নিম্নোক্ত নিউজ মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে:
৪। পুলিশ চাইলেই কি কোন ব্যক্তিকে পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে? BanglaNews.Com.Bd, February 23, 2013
৮। পুলিশ চাইলেই কি কোন ব্যক্তিকে পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে? Bangladesh-Web.Com, February 23, 2013
১৫। পুলিশ চাইলেই কি কোন ব্যক্তিকে পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে? PrimeNewsBd24.Com, February 23, 2013
১৮। পুলিশ চাইলেই কি কোন ব্যক্তিকে পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে?NewsBd71.Com, February 23, 2013
১৯। পুলিশ চাইলেই কি কোন ব্যক্তিকে পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে? Gorai24.Com
20. পুলিশ চাইলেই কি কোন ব্যক্তিকে পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে? JhenidahNews24.Com
======================================================================
Personal site of Advocate Shahanur Islam (an young, ascendant and promising human rights defender and lawyer) working for ensuring human rights, rule of law and social justice in Bangladesh and the Globe. কপিরাইট © অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত. সকল সত্ব ® সংরক্ষিত. শাহানূর ডট ব্লগস্পট ডট কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোন নিবন্ধ, মতামত, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ব্যতীত ব্যবহার আইনগত দণ্ডনীয়.
১৯। পুলিশ চাইলেই কি কোন ব্যক্তিকে পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে? Gorai24.Com
20. পুলিশ চাইলেই কি কোন ব্যক্তিকে পরিচয় প্রদানে বাধ্য করতে পারে? JhenidahNews24.Com
======================================================================
Personal site of Advocate Shahanur Islam (an young, ascendant and promising human rights defender and lawyer) working for ensuring human rights, rule of law and social justice in Bangladesh and the Globe. কপিরাইট © অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত. সকল সত্ব ® সংরক্ষিত. শাহানূর ডট ব্লগস্পট ডট কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোন নিবন্ধ, মতামত, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ব্যতীত ব্যবহার আইনগত দণ্ডনীয়.