Wednesday, April 27, 2016

যদি ভিটে মাটি না থাকে তবে উন্নয়ন দিয়ে কি হবে?

অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত
নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার তাজপুর খনি থেকে বানিজ্যিক ভাবে চুনাপাথায় উত্তোলন করা হলে সংশ্লিষ্ট এলাকা মারাত্বকভাবে পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে পতিত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চুনাপাথর খনির উপর সমীক্ষায় দেখা গেছে যে খনি মুখ থেকে চারিদিকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা
সবচেয়ে বেশী ঝুঁকির মধ্যে থাকে। সে হিসেবে তাজপুর চুনাপাথর খনির চারিদিকে ২ কিলোমিটার এলাকায় মধ্যে অবস্থিত বারফালা, জোলাপাড়া, তাজপুর, দৌলতপুর, নাজিরপুর, লক্ষীপুর, এনায়েতপুর, হাজিপুর, মহেশপুর, কটকবাড়ী এই ১০ টি গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু বসতভিটা, পুকুর, বাগান ও ফসলী জমি থেকে উচ্ছেদই নয় এলাকায় স্বাস্থ্যগত-পরিবেশগত ও জীব-বৈচিত্রের মারাত্বক বিপর্যয় নেমে আসবে।


চুনাপাথর খনি খনন পরবর্তী সময়ে চুনাপাথর উত্তোলনের জন্য খনি অভ্যন্তরে বিস্ফোরণ ঘটানো, খণ্ডিত চুনাপাথর স্থানান্তর ও চূর্ণ করার ফলে অনেক বেশী পরিমান বিভিন্নরকম ক্ষতিকারক বস্তুকণার সৃষ্টি হবে। একই সাথে ক্ষতিকারক সালফার ডাই অক্সাইড, মনো-নাট্রোজেন অক্সাইড, কার্বণ ডাই অক্সাইড ও মনো কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হবে এবং বাতাসে প্রচুর ধূলিকণার সৃষ্টি হয়ে মারাত্বকভাবে বায়ূ দূষণ ঘটাবে। যার ফলে স্থানীয় জনসাধারণ ফুসফুস এবং শ্বাসনালীর ক্যান্সারসহ বিভিন্ন প্রকার মারাত্বক ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে। তাছাড়া, দম বন্ধ হওয়া, গলা ও চোখে জালা-পোড়া করা, হাঁপানি, এমফিসেমা, শ্বাসকষ্ট, ব্রংকাইটিস মত রোগে ভুগতে থাকবে।

স্থানীয় আবহাওয়া পরিস্থিতি যথা তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, বাতাসের আদ্রতা ইত্যাদির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গরমকালে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে এবং শীত কালে তাপমাত্রা কমে গিয়ে চরমভাবাপন্ন অবস্থার সৃষ্টি হবে। বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে এলাকায় প্রচণ্ড খড়া দেখা দিবে। বায়ু প্রবাহের গতি হ্রাস ও বাতাসের আদ্রতা কমে গিয়ে দমবন্ধকর একটি পরিবেশের সৃষ্টি হবে।

বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইড এর প্রভাবে সূর্যালোকের পরিমান কমে যাবে। বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের সঙ্গে ক্ষতিকারক বস্তুকণার সম্মিলনে অ্যাসিড বৃষ্টি হবে। যাতে মাটি কনায় ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। বিশেষত জমির লবনাক্ততা ও অম্লতা বৃদ্ধি পাবে, বাফারিং পরিমান হ্রাস পাবে, জমির পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাবে, ভূঅভ্যন্তরের পানির লেভেল অনেক কমে যাবে। প্রাকৃতিক ফ্লোরা-ফোনা নষ্ট হবে, ফলে জমির ফসল উৎপাদন কমে যাবে। একই সাথে বায়ু দূষণের ফলে এলাকার উদ্ভিদ ও প্রানিসম্পদের উপর মারত্বক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে।

তাই নিজেদের অস্তিত্ব, পরিবেশ আর জীব বৈচিত্র রক্ষায় এখনই সময় এগিয়ে আসার। আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের আস্তিত্ব রক্ষায় “বাস্তুভিটা রক্ষা সংগ্রাম কমিটি”র ছাতা তলে একত্রিত হয়ে সরকারের যেকোন প্রকার অগণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচারীমূলক এলাকার জনগণের স্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই!