গোপালগঞ্জে রাষ্ট্রীয় হত্যাযজ্ঞ: ইউনুস প্রশাসনের মুখোশের আড়ালে এক মানবাধিকার বিপর্যয়
১৬ জুলাই ২০২৫, বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি রক্তাক্ত কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এদিন আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে ক্ষমতায় আসা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মদদে, পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী গোপালগঞ্জে নিরস্ত্র সাধারণ জনতার ওপর সরাসরি গুলি চালায়। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হন, যাদের অনেকেই এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
শুধুমাত্র ইউনুস নেতৃত্বাধীন সরকারের আজ্ঞাবাহী সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে ৫ জন নিরীহ ব্যক্তিকে হত্যা এবং শতাধিককে আহত করেই ক্ষান্ত হয়নি। এরপর দিনের পর দিন কারফিউ জারি করে গোপালগঞ্জের মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
রাতের অন্ধকারে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা নিরীহ মানুষের বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে মিথ্যা মামলায় গণগ্রেফতার ও নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে। শিশুর দুধ কিনতে রাস্তায় বাধা পড়া বাবারাও তাদের দমন-নিপীড়ন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
রক্তাক্ত বাস্তবতা ও নিরস্ত্র মানুষের কান্না
ঘটনার সূচনা হয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—যাদের অঘোষিতভাবে ইউনুস প্রশাসনের সমর্থন রয়েছে—তাদের “মার্চ টু গোপালগঞ্জ” শিরোনামে এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে ‘মুজিববাদকে কবর দেওয়া হবে’—এমন স্পষ্ট উসকানিমূলক ও অবমাননাকর মন্তব্য দিয়ে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এনসিপির নেতারা বঙ্গবন্ধুর সমাধি ভাঙার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এই বক্তব্য গোপালগঞ্জে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। গ্রাম থেকে শহরের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামে।
এই সময় গোপালগঞ্জ শহরের গান্ধিয়াশুর, উলপুর, চৌরাস্তা, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীরা সমাবেশস্থলে এগোতে থাকে। ঠিক তখনই সংঘর্ষের নামে শুরু হয় রক্তপাত। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করার নামে নির্বিচারে গুলি চালায়।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (২৪), সোহেল মোল্লা (৩৫), ইমন তালুকদার (২৮) ও রমজান মুন্সি (৩৫)। আরও কয়েকটি মরদেহ গোপনে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর সদস্যরা একজন গুলিবিদ্ধ আহত বিক্ষোভকারীকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় ফেলে মুখে বুটের লাথি ও গলায় চাপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, নিরস্ত্র মানুষ টিয়ার গ্যাস ও গুলির মুখে এবং সেনাবাহিনীর শারীরিক নির্যাতনে পড়ে চিৎকার করছে। এক জায়গায় এক আহতকে পুলিশ ভ্যানে ছুঁড়ে ফেলা হয় এবং একজন পুলিশ সদস্য বলেন, “মরার ভান করছে।” আরও একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজনের পেটে গুলির চিহ্ন থেকে সাদা অংশ বেরিয়ে এসেছে। অন্যদিকে, স্থানীয়রা জানান, অনেক মানুষ নিখোঁজ।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উসকানি ও দায়
জাতীয় নাগরিক পার্টি যে সংগঠনটি এই উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে, তারা গত কিছুদিন ধরেই উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছিল। বিশেষ করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাসভবন ও যাদুঘর যেভাবে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, ঠিক একইভাবে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে আসছিল। তাদের কর্মকাণ্ড ও প্রশাসনিক ছত্রচ্ছায়ায় সমাবেশ আয়োজন থেকে স্পষ্ট যে তারা ক্ষমতাসীন ইউনুস প্রশাসনের নীরব সমর্থন পাচ্ছে।
‘মুজিববাদকে কবর দেওয়া হবে’, ‘টুঙ্গিপাড়ার সমাধি ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হবে’—এ ধরনের বক্তব্য কেবল উসকানিমূলক নয়, বরং এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী মানসিকতার প্রকাশ। এই ধরনের বক্তব্য পেনাল কোড-এর ১৫৩A এবং ৫০৫ ধারায় ফৌজদারি অপরাধ। অথচ এনসিপির কোনো নেতাকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি।
বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের দৃষ্টিতে এই ঘটনা
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১, ৩২ এবং ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের অধিকার, নিরাপত্তা ও ন্যায্য বিচারের অধিকার রয়েছে। কিন্তু গোপালগঞ্জে যারা নিহত হয়েছেন, তারা কোনো আদালতের মুখোমুখি হননি, তাদের কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়নি, অথচ তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। এটি সরাসরি বিচারবহির্ভূত হত্যা।
পুলিশ আইন, ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC) এবং সামরিক বাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে হলে পরিস্থিতির প্রয়োজন, অনুমতি ও সতর্কতার ন্যূনতম মাত্রা থাকতে হয়। কিন্তু সেসব নীতি না মেনেই প্রাণঘাতী অস্ত্র চালানো হয়েছে, যা সংবিধান ও আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ
এই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনাকে আত্মরক্ষার্থে ঘটেছে বলে পাশ কাটানো যায় না। বরং এটি একটি স্পষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধ। কারণ, এখন পর্যন্ত কোনো সেনা সদস্যকে বিক্ষোভকারীদের আঘাতে ন্যূনতম আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র-এর ৩ ও ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জীবনের অধিকার এবং নিষ্ঠুর-অমানবিক আচরণ থেকে সুরক্ষা প্রত্যেক মানুষের অধিকার। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদের ৬ ও ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা স্বেচ্ছাচারী হত্যা এবং নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ এই চুক্তির পক্ষ রাষ্ট্র।
অধিকন্তু, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সংবিধি (Rome Statute of the ICC)-এর ৭(১)(a), (h), (k) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
তাছাড়া, নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক চুক্তি (CAT) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির ওপর ইচ্ছাকৃত শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন আন্তর্জাতিক অপরাধ। সেনা ও পুলিশ সদস্যদের ভিডিও ফুটেজে এই অপরাধের প্রত্যক্ষ প্রমাণ মেলে।
UN Basic Principles on the Use of Force and Firearms অনুযায়ী ‘প্রয়োজনীয়তা ও অনুপাতিকতা’র নীতি কঠোরভাবে মানা আবশ্যক। গোপালগঞ্জে এই নীতি লঙ্ঘিত হয়েছে।
কেন গোপালগঞ্জের ঘটনা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের মধ্যে পড়ে?
গোপালগঞ্জে সংঘটিত রাষ্ট্রীয় সহিংসতা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে "অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ" নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদিত, পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যমূলক আক্রমণ, যা আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ পূরণ করে।
Rome Statute of the International Criminal Court-এর ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “A widespread or systematic attack directed against any civilian population, with knowledge of the attack, constitutes crimes against humanity.” গোপালগঞ্জে যে ধরনের সহিংসতা চালানো হয়েছে—সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমন্বিত আক্রমণ, যেটি ভিডিওচিত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে প্রমাণিত—তা ছিল 'widespread' (বিস্তৃত) এবং 'systematic' (পদ্ধতিগত)।
এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সরকারের মৌন অনুমোদন ও পরিকল্পনার অংশ। কারণ, সাধারণ জনগণকে হত্যার সময় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মনিটরিং সেলে উপস্থিত থেকে সরাসরি হত্যাকাণ্ড মনিটর করছিলেন—এমন ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া, যদি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের উসকানির জবাবে নিরস্ত্র প্রতিবাদকারীদের টার্গেট করে হত্যা চালানো হয়, তবে তা সংঘাতকালীন আন্তর্জাতিক মানবিক আইন বা laws of war–এর আওতায় যুদ্ধাপরাধ (war crime) হিসেবেও গণ্য হতে পারে, বিশেষ করে যদি সরকারপক্ষ একটি রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে নিরস্ত্র নাগরিকদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে। ১৯৪৯ সালের Geneva Conventions এবং এর অতিরিক্ত প্রোটোকল অনুসারে, নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা যুদ্ধাপরাধ।
মিডিয়া ও তথ্য নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি
রাষ্ট্রীয় ও কর্পোরেট-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট। তারা নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের হত্যার চেয়ে ‘বিক্ষোভকারীরা এনসিপির ওপর হামলা চালিয়েছে’—এমন আঙ্গিকে সংবাদ পরিবেশন করে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, অধিকাংশ মিডিয়া ভুক্তভোগীদের দায়ী করে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং যেসব খবর বা ভিডিও ছড়িয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে অনেক ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
তাছাড়া, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নিহত বা আহতদের ন্যায়বিচার ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের নির্দেশ না দিয়ে বরং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নির্লিপ্ততা
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা, এমনকি ঢাকাস্থ কূটনৈতিক মিশনগুলোর কাছ থেকেও এই হত্যাকাণ্ডের পর কোনো উদ্বেগ প্রকাশ আসেনি। অথচ পূর্বে, তুলনামূলক ছোট ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। এই দ্বিমুখী নীতি ‘স্ট্র্যাটেজিক সাইলেন্স’ বা কূটনৈতিক সুবিধার জন্য নৈতিক নীরবতা।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের এই নীরবতা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবমাননাকর। এটি শুধুমাত্র ইউনুস প্রশাসনকে আরও বেশি দায়িত্বহীন হতে উৎসাহিত করবে।
ইউনুস প্রশাসনের নৈতিক বৈধতা ও আন্তর্জাতিক দায়
মুহাম্মদ ইউনুস, যিনি শান্তিতে নোবেলজয়ী হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানিত, বর্তমানে এমন এক প্রশাসনের নেতৃত্বে রয়েছেন যা বিচারবহির্ভূত হত্যা, দমন-পীড়ন ও বাকস্বাধীনতার দমনকে নীতিতে পরিণত করেছে। তাঁর সরকারের নৈতিক বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ এটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, বরং একটি অস্বচ্ছ ও অঘোষিত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমঝোতার মাধ্যমে গঠিত।
এই প্রশাসনের অধীনে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় ইউনুস ব্যক্তিগতভাবে এড়াতে পারেন না। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের উচিত, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত শুরু করা এবং প্রয়োজনে রোম সংবিধির অধীনে মামলা দায়ের করা।
ন্যায়বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার
গোপালগঞ্জের দীপ্ত সাহা, রমজান কাজী, সোহেল মোল্লা, ইমন তালুকদার ও রমজান মুন্সি কেবল নাম নয়—তারা আজ রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রতীক। প্রতিটি গুলির শব্দ, প্রতিটি চিৎকার আজ এই প্রশ্ন তোলে: একটি রাষ্ট্র কি এভাবে নিজ নাগরিককে হত্যা করতে পারে?
আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং বিবেকবান রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানাই: এই হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করুন। ইউনুস প্রশাসনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার কাঠামোয় নিয়ে আসুন। বাংলাদেশের মানুষ যেন আর কখনো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এই রক্ত, এই আর্তনাদ চুপ করে থাকবে না। ইতিহাস একদিন এই নীরবতা ও এই হত্যার দায় একত্রে বিচার করবে।
পরিশেষে
নির্মম সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের এক নৃশংস উদাহরণ হয়ে থাকবে গোপালগঞ্জের ১৬ জুলাই ২০২৫-এর ঘটনা। মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলি চালিয়ে অন্তত চারজনকে হত্যা করে, আহত করে শতাধিক।
জাতীয় নাগরিক পার্টির উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রশাসনের নীরব সমর্থন এই হত্যাকাণ্ডের পূর্বসূত্র। সংবিধান, জাতীয় আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের পরিপন্থী এই ঘটনা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্যযোগ্য।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা উদ্বেগজনক। এই রক্তপাত ও নিপীড়নের জন্য ইউনুস প্রশাসনের নৈতিক এবং আন্তর্জাতিক জবাবদিহি অপরিহার্য। গোপালগঞ্জের শহীদদের স্মরণে এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক তদন্ত ও বিচার এখন সময়ের দাবি।
Massacre parrainé par l’État à Gopalganj : une catastrophe des droits humains derrière le masque de l’administration Yunus
Le 16 juillet 2025 restera gravé comme une autre journée noire ensanglantée dans l’histoire du Bangladesh. Ce jour-là, sous le commandement du gouvernement intérimaire dirigé par le lauréat du prix Nobel de la paix Muhammad Yunus — une administration arrivée au pouvoir en promettant l’État de droit, la démocratie et les droits humains — l’armée, aux côtés de la police, a ouvert le feu sur des civils non armés à Gopalganj. Au moins cinq personnes ont été tuées et plus d’une centaine blessées, tandis que plusieurs sont encore portées disparues.
Ils ne se sont pas arrêtés aux seules morts et blessures ; ils ont aussi arraché les droits fondamentaux des habitants de Gopalganj en imposant un couvre-feu dès le jour des violences.
En pleine nuit, des membres de la police, de l’armée et de la marine ont enfoncé les portes des domiciles civils, procédant à des arrestations massives sous des accusations fabriquées et infligeant des tortures brutales. Même les pères de famille sortis acheter du lait pour leurs enfants n’ont pas été épargnés par la cruauté du régime.
Une réalité sanglante et les cris des sans-défense
Les événements ont été déclenchés par un rassemblement organisé par le Parti des citoyens nationaux (PCN) — un groupe largement considéré comme bénéficiant d’un soutien secret de l’administration Yunus. Lors de leur « Marche vers Gopalganj », les dirigeants du PCN ont tenu des propos provocateurs et profondément offensants à l’encontre de Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, déclarant leur intention de « enterrer le mujibisme ». Pendant des semaines avant l’incident, ils avaient menacé de démolir le mausolée de Bangabandhu.
Ces déclarations ont suscité une immense colère à Gopalganj. Des citoyens ordinaires, des zones rurales comme urbaines, sont descendus dans la rue pour protester.
Alors que les manifestants venus de Gandhiasur, Ulpur, Chourasta et de l’ancien terminal de bus se dirigeaient vers le lieu du rassemblement, les forces de l’État ont répondu par une violence létale sous prétexte de maintenir la « sécurité ».
Parmi les victimes figurent Dipta Saha (25 ans), Ramzan Kazi (24 ans), Sohel Molla (35 ans), Imon Talukder (28 ans) et Ramzan Munshi (35 ans). Des rapports affirment que d’autres corps ont été secrètement enlevés. Des images sur les réseaux sociaux montrent des soldats traînant un manifestant blessé, lui écrasant le visage et le cou avec leurs bottes militaires jusqu’à ce que la mort soit assurée.
Dans plusieurs vidéos, des civils non armés sont vus criant alors qu’ils sont gazés, pris pour cible par des tirs et agressés physiquement. Dans une scène, un homme blessé est jeté dans une fourgonnette de police tandis qu’un officier commente : « Il fait semblant d’être mort. » Une autre vidéo montre une blessure par balle à l’abdomen avec des tissus internes visibles. Les habitants signalent de nombreuses disparitions.
Le rôle du PCN dans l’incitation et la responsabilité
Le Parti des citoyens nationaux est principalement responsable de cette violence. Pendant des mois, ils ont tenu des propos incendiaires. En février, ils ont détruit la résidence historique et le musée de Bangabandhu à Dhanmondi 32 à Dhaka. Ils avaient menacé ouvertement de raser le mausolée de Tungipara, Gopalganj, de la même manière. Le fait qu’ils aient été autorisés à organiser un tel rassemblement sous protection étatique témoigne d’une complicité tacite de l’administration Yunus.
Des déclarations telles que « Le mujibisme sera enterré » et « Le mausolée de Tungipara sera réduit en poussière » ne sont pas seulement incendiaires, elles constituent un crime selon les articles 153A et 505 du Code pénal. Pourtant, aucun dirigeant du PCN n’a été arrêté à ce jour.
Violations légales en vertu de la Constitution du Bangladesh
Les articles 31, 32 et 35 de la Constitution garantissent à chaque citoyen le droit à la vie, à la sécurité et à un procès équitable. Les personnes tuées à Gopalganj n’ont jamais été présentées devant un tribunal, aucune culpabilité n’a été établie — pourtant elles sont mortes sous les balles de l’État. Cela constitue un meurtre extrajudiciaire.
L’utilisation de la force létale par la police ou l’armée doit respecter les conditions de nécessité, d’autorisation et de proportionnalité, telles que définies par la Loi sur la police, le Code de procédure pénale et les codes militaires. Aucune de ces conditions n’a été respectée, rendant cet acte manifestement anticonstitutionnel et illégal.
Un crime au regard du droit international des droits humains
Ce niveau de force excessive ne peut être justifié comme un acte de légitime défense. Aucun rapport ne fait état de blessures subies par les forces de sécurité.
Selon les articles 3 et 5 de la Déclaration universelle des droits de l’homme, chaque individu a droit à la vie et à la protection contre les traitements cruels, inhumains ou dégradants. Les articles 6 et 7 du Pacte international relatif aux droits civils et politiques (PIDCP), auquel le Bangladesh est partie, interdisent les exécutions arbitraires et la torture.
De plus, les articles 7(1)(a), (h) et (k) du Statut de Rome de la Cour pénale internationale considèrent les attaques intentionnelles menées par l’État contre des civils comme des crimes contre l’humanité.
La Convention contre la torture (CAT) interdit également l’infliction intentionnelle de douleurs physiques ou mentales par des agents de l’État. Les preuves vidéo montrent des violations claires.
Selon les Principes fondamentaux de l’ONU relatifs à l’usage de la force et des armes à feu, toute utilisation de la force doit respecter les principes de « nécessité et de proportionnalité » — clairement bafoués à Gopalganj.
Pourquoi cela constitue un crime contre l’humanité et un crime de guerre
La violence sanctionnée par l’État à Gopalganj dépasse la simple utilisation excessive de la force — elle constitue une attaque coordonnée et délibérée, remplissant les critères d’un crime contre l’humanité selon le droit international.
L’article 7 du Statut de Rome définit les crimes contre l’humanité comme « une attaque généralisée ou systématique dirigée contre une population civile, en connaissance de cause ». La nature des violences à Gopalganj — attaques conjointes de la police et de l’armée contre des civils, documentées par des images et des témoignages — était à la fois généralisée et systématique.
Il ne s’agit pas d’un incident isolé. Des rapports révèlent que des conseillers clés du cabinet étaient présents dans la cellule de surveillance du commissariat pendant les violences, supervisant le massacre en temps réel.
De plus, si l’État a répondu à l’incitation de l’opposition en ciblant des manifestants non armés, cela pourrait également relever du droit de la guerre, notamment comme crime de guerre. Selon les Conventions de Genève de 1949 et leurs protocoles additionnels, cibler des civils en temps de conflit est un crime de guerre.
La politique du silence médiatique et de la censure
Le rôle des médias contrôlés par l’État et les entreprises a été honteusement partial. Au lieu de rapporter le massacre de manifestants pacifiques, la plupart des médias ont insisté sur le fait que les protestataires avaient attaqué le PCN.
Pire encore, une grande partie des médias a présenté les victimes comme les instigateurs. Les réseaux sociaux ont été bridés, et les comptes partageant des images ou des informations ont été signalés et temporairement désactivés.
Au lieu d’appeler à la justice ou au traitement des blessés, le bureau du conseiller principal a ordonné aux autorités de durcir la répression contre les manifestants.
Le silence assourdissant de la communauté internationale
Aucune expression de préoccupation n’a été émise par les Nations Unies, l’Union européenne, les organisations locales ou internationales de défense des droits humains, ni même par les missions diplomatiques à Dhaka. Pourtant, ces mêmes acteurs ont souvent réagi vigoureusement à des violations moindres dans le passé. Ce double standard reflète un silence stratégique — une mutité morale au nom de la convenance diplomatique.
Ce silence est une insulte au peuple bangladais et ne fera qu’encourager davantage le régime Yunus.
La responsabilité morale et internationale de l’administration Yunus
Muhammad Yunus, mondialement respecté comme lauréat du prix Nobel de la paix, dirige aujourd’hui une administration qui a institutionnalisé les exécutions extrajudiciaires, la répression et le musèlement de la dissidence. La légitimité morale de son gouvernement est profondément compromise, car il n’a pas été élu mais formé à travers des accords domestiques et internationaux opaques.
Yunus ne peut personnellement se dérober à sa responsabilité dans ces violations des droits humains. La Cour pénale internationale et le Conseil des droits de l’homme de l’ONU doivent lancer des enquêtes indépendantes et envisager des poursuites au titre du Statut de Rome si nécessaire.
Un appel à la justice mondiale
Dipta Saha, Ramzan Kazi, Sohel Molla, Imon Talukder et Ramzan Munshi ne sont pas que des noms — ils sont les symboles de l’oppression d’État. Chaque coup de feu, chaque cri pose la même question : un État peut-il massacrer ainsi ses propres citoyens ?
Nous appelons la communauté internationale, les défenseurs des droits humains et toutes les nations de conscience à garantir une enquête impartiale et indépendante sur ces assassinats et à tenir l’administration Yunus responsable des crimes contre l’humanité. Qu’aucun citoyen bangladais ne soit plus jamais victime de la terreur d’État.
Ce sang, ces cris ne seront pas réduits au silence. L’histoire jugera un jour à la fois les meurtriers et les silencieux.
Conclusion
Les événements du 16 juillet 2025 à Gopalganj resteront un exemple brutal de violence d’État, d’exécutions extrajudiciaires et de graves violations des droits humains. Avec le soutien direct du gouvernement intérimaire de Muhammad Yunus, les forces de sécurité ont tiré sur des citoyens non armés, tuant au moins cinq personnes et en blessant des centaines.
L’incitation du Parti des citoyens nationaux et le soutien tacite du gouvernement ont été les prémices de cette tragédie. Cette attaque, en violation des cadres juridiques nationaux et internationaux, constitue clairement des crimes contre l’humanité.
Le silence de la communauté internationale est alarmant. La responsabilité morale et internationale de l’administration Yunus est impérative. En mémoire des martyrs de Gopalganj et dans la quête de justice, une enquête et une poursuite internationales sont désormais indispensables.
No comments:
Post a Comment