সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন: বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউআই+ অধিকার বিষয়ক বাৎসরিক প্রতিবেদন ২০২৪।
প্যারিস, ১৭ মে ২০২৫: ফ্রান্সভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ) আজ ‘বাংলাদেশের বার্ষিক সমকামী অধিকার প্রতিবেদন ২০২৪’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংগঠনটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউআই+ সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরে।
প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা, অনলাইন সংবাদমাধ্যম এবং জেএমবিএফ-এর নিজস্ব অনুসন্ধান ও তথ্যভাণ্ডারের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে লেসবিয়ান, গে, ট্রান্সজেন্ডার, ইন্টারসেক্স এবং যৌন সংখ্যালঘু অন্যান্য ব্যক্তিদের ওপর সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, শারীরিক নির্যাতন, আত্মহত্যা, পুলিশি হয়রানি, গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলাসহ নানা রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ৭০টি ঘটনার মধ্যে ৩৯৬ জন এলজিবিটিকিউআই+ ব্যক্তি সহিংসতার শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে এই সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। অনেকেই আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন, যা মানবাধিকারের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক ও উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশের মানবাধিকার আইনজীবী ও জেএমবিএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত বলেন, “বাংলাদেশে সমকামী এবং অন্যান্য যৌন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি চলমান সহিংসতা, সামাজিক বর্জন এবং বৈষম্য কেবল উদ্বেগজনক নয়, এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। একটি গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব নাগরিক আজ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যও নিরাপদ নন। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে কার্যকর আইন ও নীতি গ্রহণ করে এই সহিংসতার অবসান ঘটাক এবং অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনুক।”
জেএমবিএফ-এর প্রধান উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ফরাসি সমকামী অধিকারকর্মী রবার্ট সাইমন বলেন, “বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউআই+ সম্প্রদায়ের ওপর চলমান সহিংসতা ও নিপীড়নের মাত্রা গভীর উদ্বেগের বিষয়। একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন কেবল অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে নয়, বরং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষার মধ্য দিয়েই পরিপূর্ণতা লাভ করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে,বাংলাদেশে এখনও যৌন ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যকে সম্মানজনকভাবে মেনে নেওয়ার সামাজিক পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। জেএমবিএফ-এর এই প্রতিবেদন কেবল একটি দলিল নয়, এটি একটি আওয়াজ—যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে সংকেত দেয় যে, নীরবতা ভেঙে এখন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।”
তিনি আরও বলেন: “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই প্রতিবেদনকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে এবং বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউআই+ ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।”
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা কোনো আইনি প্রতিকার পায়নি। অনেক ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করতে পারেননি বা পুলিশের কাছে যেতে সাহস পাননি। এমন পরিস্থিতিতে জেএমবিএফ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংস্থা এবং নাগরিক সমাজকে এ বিষয়ে আরও সচেতনতা গড়ে তোলার এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
জেএমবিএফ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে, এই প্রতিবেদন সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মহলে মানবাধিকার রক্ষায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশে সমকামী অধিকার বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৪ (সারাংশ)
২০২৪ সালে বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউআই+ (সমকামী) সম্প্রদায়ের প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর অন্তত ৭০টি ঘটনায় ৩৯৬ জন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এসব সহিংসতার মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ড, শারীরিক নির্যাতন, আত্মহত্যা, পুলিশি নির্যাতন ও আটক, অপরাধী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড প্রদান, হয়রানি, মৃত্যুর হুমকি, চাকরিচ্যুতি এবং বসতবাড়ি ও ব্যবসায়িক স্থাপনায় হামলা ও লুটপাট।
২০২৪ সালের শুরুতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সপ্তম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান বইয়ে “শারিফার গল্প” নামে একটি ট্রান্সজেন্ডার কিশোরীর জীবনের ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। তবে এই উদ্যোগ দেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক গোষ্ঠী, প্রো-ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিক্ষোভ শুরু হয় এবং জনদাবির মুখে সরকার পাঠ্যবই থেকে গল্পটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
অগাস্ট মাসে যখন পুরোনো সরকারের পতন ঘটে এবং নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়, তখনই ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীর প্রভাব উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মৌলবাদীদের উত্থানকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন গোষ্ঠী এলজিবিটিকিউআই+ ব্যক্তিদের উপর আক্রমণ ও সহিংসতা চালায়। এর ফলে অনেক সমকামী ব্যক্তি গোপনে জীবনযাপন করতে বাধ্য হন এবং নিরাপত্তার অভাবে ঘরবন্দি হয়ে পড়েন।
গত তিন বছরে সমকামী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ২০২২ সালে ৫১টি ঘটনায় ২০৪ জন, ২০২৩ সালে ৫৬টি ঘটনায় ২১৯ জন, এবং ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০টি ঘটনায় ৩৯৬ জনে। এই বৃদ্ধি এক বিপজ্জনক ও দুঃখজনক প্রবণতা নির্দেশ করে, যা বাংলাদেশের সমকামী জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
২০২৪ সালে, শুধু পাঁচটি ঘটনায় পাঁচজন ট্রান্সজেন্ডার নারীকে হত্যা করা হয়েছে। একই বছর আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যু হয়েছে ১০ জন এলজিবিটিকিউআই+ ব্যক্তির। শারীরিক আক্রমণের ১২টি ঘটনায় অন্তত ৮৩ জন আহত হন। স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী এবং পুলিশ বাহিনী যৌথভাবে ৮টি ঘটনায় ১৮ জনকে আটক করে। এছাড়াও, ২১টি ঘটনায় ৯০ জনকে ফৌজদারি মামলায় জড়ানো হয় এবং ১৭টি পৃথক ঘটনায় ৪১ জন সমকামী ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন। একটি ঘটনায়, সংগৃহীত প্রমাণের ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত বিচার শেষে পাঁচজন ট্রান্সজেন্ডার নারীকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
চারজন শিক্ষক শুধুমাত্র তাঁদের যৌন অভিমুখিতার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। একাধিক ঘটনার মধ্যে অন্তত একজন ইন্টারসেক্স ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয় এবং তিনজন ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হন। দুটি ঘটনায় ১২০ জন ট্রান্সজেন্ডার নারীকে তাঁদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, ঘরবাড়ি ভাঙচুর এবং লুটপাট চালানো হয়। এছাড়াও ২৪টি পৃথক ঘটনায় ২৬৭ জন এলজিবিটিকিউআই+ ব্যক্তি নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হন, যা এই জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত নিপীড়নের প্রমাণ দেয়।
ভৌগোলিক দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সহিংসতার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এখানকার ৩১টি ঘটনায় মোট ২৩৮ জন সমকামী ব্যক্তি সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এরপরে রংপুর বিভাগে ৬টি ঘটনায় ৮৬ জন এবং সিলেট বিভাগে ১০টি ঘটনায় ৩৪ জন ভুক্তভোগী হয়েছেন। চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিভাগে সহিংসতার ঘটনা তুলনামূলকভাবে কমেছে—এখানে যথাক্রমে ১১ ও ৫ জন আহত বা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে ৩টি ঘটনায় ৭ জন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের পরিচয় বিচারে দেখা যায়, মোট ৩৯৬ জনের মধ্যে ২৩ জন লেসবিয়ান নারী, ১১২ জন গে, একজন বাইসেক্সুয়াল এবং একজন ইন্টারসেক্স ব্যক্তি সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা—৪৩টি ঘটনায় মোট ২৬৯ জন ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি নিপীড়নের শিকার হন।
এই সহিংসতা মূলত ইসলামিক মৌলবাদী গোষ্ঠী, আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে উৎসারিত। মৌলবাদীদের দ্বারা সংঘটিত ১৪টি ঘটনায় ২৩৪ জন ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার হন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা পরিচালিত ২১টি ঘটনায় ১৪৭ জন ভুক্তভোগী হন এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের ভেতরকার দ্বন্দ্বের কারণে ১২টি ঘটনায় ৮৯ জন আক্রান্ত হন।
যৌন সংখ্যালঘু সমকামী সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা ও নিপীড়নের জন্য সামাজিক অগ্রহণযোগ্যতা একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সামাজিক অগ্রহণযোগ্যতার ফলশ্রুতিতে ৪৩টি ঘটনায় ২৮৩ জন ব্যক্তি ভুক্তভোগী হয়েছেন। এছাড়া অর্থনৈতিক শোষণ, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক শ্রম ও আর্থিক নিপীড়নের কারণে ১৩টি ঘটনায় ৭৭ জন নির্যাতিত হন। হিজড়া সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরীণ বিরোধও সহিংসতার আরেকটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২০২৪ সালে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ প্রতিবেদনে এলজিবিটিকিউআই+ ব্যক্তিদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে মাত্র ৪২ শতাংশ প্রতিবেদনে তাঁদের নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
আইনি পদক্ষেপের দিক থেকে চিত্রটি আরও হতাশাজনক। ৭০টি ঘটনার মধ্যে মাত্র ১৩টি ঘটনায় থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, যার আওতায় ৭৩ জন ভুক্তভোগী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বাকি ৫৭টি ঘটনায় ৩২৩ জন ভুক্তভোগী মামলা করতে পারেননি—যা প্রমাণ করে যে আইনি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভয়, সামাজিক চাপ এবং প্রশাসনিক বাধা অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক।
উল্লেখযোগ্যভাবে, রেকর্ড করা ১৩টি মামলার মধ্যে মাত্র ৬টিতে ২২ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সীমিত সংখ্যক গ্রেপ্তার দেশের বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং অপরাধীদের দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অনেক অপরাধী এখনও গ্রেপ্তার হয়নি বা বিচারের মুখোমুখি হয়নি, যা ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে বড় বাধা।
বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউআই+ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে জেএমবিএফ-এর সুপারিশসমূহঃ
বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউআই+ সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন, হয়রানি এবং সামাজিক বর্জনের শিকার হচ্ছেন, যা একটি গভীর ও স্থায়ী মানবাধিকার সংকট সৃষ্টি করেছে। এই বাস্তবতাকে মোকাবেলার জন্য জেএমবিএফ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট নিম্নরূপ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে:
প্রথমত, দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিল করা জরুরি, কারণ এটি সমলিঙ্গ সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে, ফলে আইনিভাবে বৈষম্য ও সহিংসতা উৎসাহিত হয়। পাশাপাশি, যৌন প্রবণতা ও লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ করে একটি সমন্বিত বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়ন করতে হবে। একইসঙ্গে, ঘৃণাজনিত অপরাধকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা উচিত, যাতে এসব অপরাধ নিরুৎসাহিত হয়।
দ্বিতীয়ত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার ও এলজিবিটিকিউআই+ সংবেদনশীলতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা পক্ষপাতহীন ও সম্মানজনক আচরণ করতে পারেন। এছাড়া, সহিংসতার শিকারদের সহায়তার জন্য একটি বিশেষ ইউনিট গঠন এবং সহজ, গোপনীয় ও নিরাপদভাবে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগীদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও অপরিহার্য।
তৃতীয়ত, সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সচেতনতামূলক প্রচারণার মাধ্যমে এলজিবিটিকিউআই+ ব্যক্তিদের প্রতি ঘৃণা ও ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে হবে। এই প্রচারণায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং স্থানীয় ও ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করা উচিত। পাশাপাশি,বিদ্যালয় পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবাধিকারভিত্তিক শিক্ষা চালু করে শিশুদের মধ্যে সহানুভূতি ও সহনশীলতা গড়ে তোলা জরুরি।
চতুর্থত, সহিংসতার শিকারদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। একটি গোপনীয় হেল্পলাইন ও কমিউনিটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
পঞ্চমত, গণমাধ্যমে এলজিবিটিকিউআই+ ব্যক্তিদের বাস্তব, সম্মানজনক ও ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে সমাজে বিদ্যমান নেতিবাচক স্টেরিওটাইপ দূর হয়। একই সঙ্গে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে সহিংসতার ঘটনার তথ্য প্রকাশ ও জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য গণমাধ্যমকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
সর্বশেষে, এই সমস্যা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে এলজিবিটিকিউআই+ জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষিত হয়।
ধন্যবাদসহ-
অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ)
ইমেইল: shahanur.islam@jmbf.org
মোবাইল: +৩৩৭৮৩৯৫২৩১৫
ওয়েবসাইট: www.jmbf.org
***************************************************************************
JMBF is an independent non-profit, nonpartisan human rights organization registered in France with registration number W931027714 under the association law of 1901, dedicated to defending human rights, fighting for justice, and empowering communities in Bangladesh and beyond.
No comments:
Post a Comment